9/1/09

'কিং খান' এর পারিশ্রমিক অর্ধকোটি টাকা


এবার ঈদেও শাকিব খানের সর্বাধিক ছবি মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তাই আবারও তিনি নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। যদিওবা তার জন্য এ যুদ্ধ মোটেও নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই এমনটি ঘটছে। আর প্রতিবারই তিনি পার পেয়ে গেছেন আপন যোগ্যতায়। কিন্তু এই যুদ্ধের শেষ কোথায়? জবাবে শাকিব খান বলেন, 'আমিও তো এই চাই না। নিজের সঙ্গে নিজের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ভালো লাগছে না। ব্যবসাসফল নায়ক হিসেবে আমি চাই আমার প্রতিটা ছবিই ব্যবসা করুক। কারণ কোটি টাকা লগি্ন করার পর একটি ছবি ব্যবসাসফল না হলে নিন্দুকেরা সেই ব্যর্থতার দায় আমার ওপর চাপাতে চায়। কিন্তু এক শাকিব খান আর কত ঘানি টানবে। আমি আর কিছু পারি বা না পারি দর্শকদের সুস্থ ধারার ছবির মাধ্যমে হলে ফিরিয়ে এনেছি। আমি চাই নতুনরা ভালো করুক। শূন্যতা পূরণ হোক। সত্যিকার অর্থে আমাদের চলচ্চিত্রে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী, প্রযোজক-পরিচালক, এমনকি টেকনিশিয়ানেরও সংকট রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে শাকিবের ছবি একের পর এক ব্যবসাসফল হলেও নানা ঘটনায় বিতর্কিতও হয়েছেন তিনি। যেমন প্রতিটি ছবিতে নায়িকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার পছন্দকে প্রাধান্য দিতে বাধ্য হন পরিচালকরা। সিডিউল ঘাপলার অভিযোগ তো আছেই। সঠিক সময়ে সেটে না আসাটা যেন তার রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর ব্যক্তিজীবনে তার অনিয়মের কথাটা বাদই দিলাম। অন্যদিকে শাবনূরের সঙ্গে ছবি না করা, শুটিং স্পটে পূর্ণিমার সঙ্গে মনোমালিন্যসহ নানা ঘটনা তার ক্যারিয়ারে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। নিজের পারিশ্রমিকও প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি প্রতি ছবিতে নিজের পারিশ্রমিক অর্ধকোটি টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার উচ্চাশার ঘোড়াটাও টগবগিয়ে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু সে ঘোড়ার লাগাম নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে তো! তাই সাবধান শাকিব খান। আপনি কিন্তু অনেক কিছুই দেখতে দেখতে বেড়ে উঠেছেন আমাদের চলচ্চিত্রে। একসময় যাদের ছবি দেখে আপনি চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেছিলেন, তাদের সবাইকে পিছু ফেলে আপনি এখন 'নাম্বার ওয়ান'। যার ফলশ্রুতিতে ঢালিউডে 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান' নামে একটি ছবিও নির্মিত হচ্ছে। ছবিটি পরিচালনা করছেন বদিউল আলম খোকন। ছবিটি প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, ভালো বাজেটের ছবি হচ্ছে 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'। ইতিমধ্যে ব্যাংককে খুব ভালো শুটিং করেছি আমরা। শুটিং বেশ ভালো হয়েছে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি এ ছবিটি বলিউডের ছবির মতোই হবে।


যা হোক, আগের কথায়ই ফিরে আসি। এখনই শাকিব খানের সাবধান হওয়া প্রয়োজন। কারণ তার একটু অতীত মনে রাখা দরকার। কিভাবে তিনি নিজের মেধা, পরিশ্রম ও যোগ্যতা দিয়ে ঢালিউডের এক নাম্বার নায়ক হয়েছেন। প্রয়াত নায়ক মান্না জীবিত অবস্থায় দেখে গেছেন তার পারিশ্রমিক টপকিয়ে শাকিব খান কিভাবে ব্যবসাসফল হচ্ছিলেন। আপন যোগ্যতায় শাকিব খান এখনও নিজের অবস্থান অটুট রেখেছেন। এ বিষয়গুলো শাকিব খানের মনে আছে তো! নইলে এমনি করেই আপনার চোখের সামনেই অন্য কেউ টপকিয়ে যাবে আপনাকে। পাশাপাশি বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার সুদর্শন শরীরে মেদ জমছে বৈকি! এত সাবধানতার কথা বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করে শাকিব খান বলেন, 'সবাই বলেন, আমি বেশি পারিশ্রমিক নেই। প্রথম কথা হল, আমার ছবি ব্যবসাসফল না হলে কি প্রযোজকরা এমনিতেই টাকা লগি্ন করছেন! ইতিমধ্যে আমার কয়েক বছরের সিডিউল বুকিং দিয়ে রাখছেন প্রযোজকরা। আবার আমি সিডিউল দিতে না পারলে নানামুখী হুমকি ও কুৎসার সম্মুখীন হতে হয়। আমিও একজন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ। এভাবে আর কতদিন। বলিউডের নায়কদের মতো বছরে কয়েকটি ছবি করে ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা রাখতে চাই আমিও। সেক্ষেত্রে উচ্চ পারিশ্রমিক বোঝা মনে হবে না। কিন্তু আমাদের দেশে সে সুযোগ কই! এখন তো আমার ব্যক্তিজীবন বলতে কিছুই নেই। নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে হচ্ছে ঢালিউডের জন্য। অথচ সবাই আমার উচ্চ পারিশ্রমিকের কথাই বলেন। আমার পরিশ্রম বা আত্দত্যাগের কথা কেউ একবারও ভাবেন না। যারা আমাকে নিয়ে এত কুৎসা রটায় তারা অন্য কাউকে নিয়ে ছবি করলেইতো পারে। সারাদিন শুটিং করতে করতে ব্যক্তিজীবন ব্যাহত হওয়ায় এখন নিয়মিত শরীরচর্চা করার সময় পাই না। এমনকি খাওয়া-দাওয়া বা বিশ্রামের ফুরসত পাই না। কাজেই অনিয়ম তো হবেই। এবার নায়িকাদের প্রসঙ্গে বলি- বর্তমান সময়ের ঢালিউডের সব নায়িকার সঙ্গে আমি কাজ করি। নায়িকা নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচালকদের আমি কখনও আমার পছন্দ চাপিয়ে দেই না। পরিচালকরা জানতে চাইলে হয়তো আমি কয়েকজন নায়িকার নাম বলি। ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ বা অপছন্দের কোনও নায়িকা নেই ইন্ডাস্ট্রিতে। আর আমি নিজ ইচ্ছায় কখনও চাই না আমার শুটিংয়ের সিডিউলে সমস্যা হোক। আমি তো চাই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে। কিন্তু শুটিং স্পটে কোনও একটা ছোটখাটো সমস্যা হলেও শুটিং পিছিয়ে যায়। তাই পরে অন্য কাউকে দেয়া সিডিউলেও সমস্যা দেখা দেয়। সিডিউল সমস্যা যে শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য হয়, তা ঠিক নয়। প্রসঙ্গক্রমে শাকিব আরও বলেন, বর্তমানে নতুনরা ভালো করছেন। নতুন যারা চলচ্চিত্রে এসেছেন আমি তাদের সাফল্য কামনা করি। কারণ আমি একা বাংলা ছবির জন্য আর কতদিন লড়াই করব। আমি চাই ঢালিউডে আরও শাকিব খান আসুক। এতে করে এদেশের সিনেমা সমৃদ্ধ হবে।


নারায়ণগঞ্জের ছেলে শাকিব খান ঢালিউডে পদার্পণ করেন রফিকুল ইসলামের 'সবাই তো সুখী হতে চায়' ছবির মাধ্যমে। কিন্তু তিনি শাকিব খান নামে আবির্ভূত হন সোহানুর রহমান সোহানের 'অনন্ত ভালোবাসা' ছবির মাধ্যমে। এটা ২০০৩ সালের ঘটনা। তারপর একটানা অ্যাকশন ছবিতে অভিনয় করলেও ২০০৫ সালে হাসিবুল ইসলাম মিজানের 'আমার স্বপ্ন তুমি'র মাধ্যমে রোমান্টিক ছবিতে প্রবেশ করেন তিনি। বাকিটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত কয়েক বছরে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাফল্যের রেকর্ড গড়েছেন। এবার ঈদে শাকিব খান অভিনীত যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তা হল 'মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি', 'জান আমার জান', 'সবার উপরে তুমি', 'বলো না কবুল', 'ও সাথী রে', 'আমার প্রাণের প্রিয়া' ও 'সাহেব নামে গোলাম'। কাজ শেষ করেছেন 'টাকার চেয়ে প্রেম বড়', 'ভালবাসা দিবি কিনা বল' ছবির। বর্তমানে তিনি শুটিং করছেন 'ভালবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না', 'এই মন তোমাকে চায়' ইত্যাদি ছবির।

2 comments: